বাংলার পুরনারী- দীনেশচন্দ্র সেন, বাংলা বই পিডিএফ
ডিজিটাল বইয়ের নাম- 'বাংলার পুরনারী'
লেখক-ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন
বইয়ের ধরন- পল্লীগীতিকা ও গল্প সংগ্রহ বই
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ৫২৩
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ২৫এমবি
প্রিন্ট ভালো, জলছাপ মুক্ত, ক্লিকেবল সূচীপত্র
স্বনামধন্য সাহিত্যিক রায় বাহাদুর ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন মহাশয়ের শেষ গ্রন্থ “বাংলার পুরনারী” । ইহা বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকের সর্বশেষ এবং অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। ব্যক্তিগত জীবনে দীনেশচন্দ্রের মত সদালাপী, নিরহঙ্কার, উদার, স্নেহশীল, ও সরল মানুষ খুব কমই দেখা যায়। এই আত্মভোলা মানুষটির কাছে সাহিত্যই ছিল ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাহিত্য-বিষয়ক চিন্তায় তাহার চিত্ত আচ্ছন্ন ছিল।
বাংলা দেশ যে এককালে জগতের অন্যতম সমৃদ্ধ প্রদেশ ছিল, তাহার প্রমাণ এই গল্পগুলির অনেক স্থানেই পাওয়া যায়। সোনার কলস, সোনার পালঙ্ক, সোনার ঝরির ত কথাই নাই; ধনীর গৃহে পরিবেশনের সময় সোনার থালা এবং সোনার বাটীর ছড়াছড়ি হইত। ধনবান গৃহস্থের ঘরের মেয়েরা বহুসংখ্যক সহচরীর সঙ্গে নদীর ঘাটে স্নান করিতে যাইতেন, তাহাদের কাহারও মাথায় স্বর্ণ কুম্ভ, কাহারও মাথায় সোনার থালায় নীলাম্বরী, অগ্নিপাটের সাড়ী বা মেঘড়ম্বর বস্ত্র, কাহারও হাতে নানারূপ গন্ধ তৈল ও প্রসাধনের দ্রব্য। চাকলাদারের কন্যা কমলার স্নানের বর্ণনা, ও রাণী কমলার সোমেশ্বরী নদীতে শেষ স্নানের বর্ণনা পাঠ করুন। চাকলাদারের মেয়ে তখন নূতন বয়সী, সহচরীরা গান গাহিতে গাহিতে ও নৃত্য করিতে করিতে চলিয়াছে। অহাদের উল্লাসের কলকাকলী নদীর তীর মুখরিত করিতেছে। পাঁচ শত টাকার হাতীর দাঁতের শীতল পাটীর উল্লেখ অনেক গীতিকায়ই পাওয়া যায়; চাকলাদারের কন্যা রাজসভায় তাঁহার বাল্যকালের যে বর্ণনা দিয়াছেন, তাহাতে এদেশের পল্লী-চিত্র একটি সোনা-বাঁধা ফ্রেমের ছবির মত ঝলমল করিয়া উঠিতেছে, বার মাস তের পার্বণে পল্লীগুলি যেন সারা বৎসর নৃত্য করিতে থাকিত। সোনার বাটায় কেয়া খয়ের, চুয়া ও এলাচি দেওয়া পানের খিলি লইয়া তরুণীরা বাসর-গৃহে প্রবেশ করিতেন। গ্রীষ্মকালে নানারূপ আসবাবে সজ্জিত জলটুঙ্গী ঘর, দীঘির জলে অবস্থিত থাকিত। দম্পতি নানা রহস্য ও মধুর আলাপে রজনী কাটাইয়া দিতেন, দীঘির জলের প্রস্ফুট। পদ্মের সুরভি লইয়া বসন্তানিল মাঝে মাঝে সেই গৃহে ঢুকিয়া তাহা সুবাসিত করিয়া দিত। গজমতির মালা, হীরার হার, সোনার দাত খোচানী কাঠি প্রভৃতি অলঙ্কারপত্র ও বিলাসের সামগ্রী যে কত ছিল তাহার ইয়ত্তা নাই, “লক্ষের শাড়ী” ত কথায় কথায় পাওয়া যায়। স্নানের সময় মেয়েরা গলার হীরার হার এবং সোনা ও জহরতের অলঙ্কার খুলিয়া রাখিতেন, পাছে তৈলসিক্ত দেহের স্পর্শে তাহারা মলিন হয়। সাধারণরূপ ধনী গৃহস্থের বাড়ীতে লড়াই করার জন্য আটটা, দশটা ষাড় থাকিত “লড়াই করিতে আছে আট গোটা যড়” (মলুয়া) এবং প্রত্যেক গৃহস্থের ঘাটেই “বাইচ” খেলিরার জন্য দীর্ঘ সুদর্শন ডিঙ্গি বাঁধা থাকিত। এই সকল গীতিকায় ভৌগোলিক বিবরণ যথেষ্ট পাওয়া যায়। রূপবতী গল্পে রাজা বাড়ী হইতে রওনা হইয়া ফুলেশ্বরী পাড়ি দিয়া নরসুন্দার মুখে পড়িলেন, এবং সেই নদী উত্তীর্ণ হইয়া ঘোড়া-উৎরা ও পরে মেঘনায় আসিয়া পড়িলেন, এইভাবে কত নদ-নদী ও তীর্থস্থানের উল্লেখ পল্লীগীতিকায় পাওয়া যায়। মোট কথা, তখনকার দিনে লোক দুই চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া জাপান বা কামস্ককা দেখিত না, তাহারা স্বপ্নবিলাসী ছিল না। তাহাদের পল্লী ও গৃহ তাহাদের বড় আদরের সামগ্রী ছিল। এখন আমরা দূরদেশ সম্বন্ধে প্রাজ্ঞ হইয়াছি, কিন্তু নিজগ্রামের নদীটির নাম পৰ্যন্ত জানি না। এই পল্লীগাথাগুলিতে যে দেশ দেখিতে পাই, তাহাই খাঁটি বঙ্গদেশ। এখন সে দেশ কোথায়—তাহার আনন্দময় শ্যামল রূপ কোথায় গেল, তাহার উৎসবগুলির কি হইল, প্রতিমা, মঠ, মসজিদ, মন্দির। নিৰ্মাণোপলক্ষে সে চারুশিল্পকলার চর্চা কোথায় গেল? এদেশে কি আর বসন্ত ঋতু আসে না, এদেশের কোকিল ও বউ-কথা-কও কি আর ডালে বসিয়া ডাকে না, কোথায় গেল সেই সকল সন্ধ্যামালতী ও কেয়া বনের সৌরভ? বর্ষা আসে—কিন্তু প্লাবন লইয়া বন্যা লইয়া তাহা কুটির ভাসাইয়া লইয়া যায়—সে বর্ষার কদম্ববর্ণ ও চাপার ঘটা ফুরাইয়া গিয়াছে। এই পল্লীগীতিকার কয়েকখানি প্রাচীন চিত্রপট আছে, তাহারও অনেকগুলি। লুপ্ত হইয়াছে। কে তাহাদের উদ্ধার করিবে? আমরা মোটরে করিয়া বিদেশীদের পাছে পাছে ঘুরিতেছি—এই পুচ্ছগ্রাহিতার দিন কবে অবসান হইবে ।
এই বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
প্রিয় পাঠকগণ, এই পোষ্ট হইতে আপনারা একটি অসাধারণ বই 'বাংলার পুরনারী- দীনেশচন্দ্র সেন' -এর বাংলা পিডিএফ সংগ্রহ করিতে পারিবেন
No comments:
Post a Comment