মোল্লা নাসিরুদ্দিন জিন্দাবাদ - অংশু মিত্র, বাংলা বই পিডিএফ
ডিজিটাল বইয়ের নাম- 'সেরা পঁচিশ হাসির গল্প'
বইয়ের ধরন- চতুরতা/সরস গল্প
ফাইলের ধরন- পিডিএফ
এই বইতে মোট পৃষ্টা আছে- ৭০
ডিজিটাল বইয়ের সাইজ- ২এমবি
প্রিন্ট খুব ভালো, জলছাপ মুক্ত
কে এই মোল্লা নসিরুদ্দীন ? বা নসিরুদ্দীন খোজা? বা নসিরুদ্দীন অবন্তী ? গোপাল ভাঁড়কে চেনো? বীরবলকে চেনো? তাহলে নসিরুদ্দীনকেও চেনো। এঁর দেশ ছিল মধ্যপ্রাচ্যেরই কোথাও, হয়তো তুর্কিতে। কবেকার লোক? তা গত সাত শ বছর ইনি বহাল তবিয়তে আছেন। এককালে খোঁড়া তৈমুর বাদশার সঙ্গে শিকারে বেরোতেন, এখন উড়োজাহাজ চড়চেন।
গোপাল ভাঁড় বা বীরবলের নামে যত গল্প চালু আচে, সব তো আর তাঁদের জীবনে ঘটে নি। এর-ওর-তার গল্প একজনের ঘাড়ে চাপিয়ে এক-একটা কথাসরিৎসাগর তৈরি হয়েছে। নসিরুদ্দীন এ বাবদে সবার থেকে এক ধাপ এগিয়ে আছেন। কোনো বাঁধা দেশ-কালের চৌহদ্দিতে তাঁকে আটকে রাখা যায় নি। গ্রীকরাও তুর্কিদের কাছ থেকে নিয়ে নসিরুদ্দীনকে তাদের লোকযানের (ফোক-লোর) অংশ করে নিয়েছে। মধ্যযুগে বড় কত্তাদের নিয়ে মস্করা করার জন্যে নসিরুদ্দীনের গল্প চালু ছিল। সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রে তাকে 'জনগণের বীর’ খাড়া করে ছবি (ফিল্ম) তোলা হয়েছে। চীনের জনসাধারণতন্ত্রে তাঁর গল্প জড়ো করে বই বেরিয়েচে-চীনে-ইংরিজি ভাষায়। জর্মন বিশ্বকোষেও তাঁর নাম পাবে (বৃটিশ বা মার্কিন বিশ্বকোষে নেই)। বল্কান ও সোভিয়েত মধ্য এশিয়ার সব জায়গায় মোল্লার দারুণ খাতির।
মোল্লাকে নিয়ে সবচেয়ে নাচানাচি করে অবশ্য তুর্কি। তাঁর জন্মস্থানের দাবিদার তুর্কির আকশিহার। মোল্লার বিখ্যাত গোরস্তান নাকি এখনো সেখানে আছে। প্রতি বছর বিরাট করে নসিরুদ্দীন মেচ্ছব হয়। নসিরুদ্দীন সেজে তার বিখ্যাত রসিকতাগুলো অভিনয় করে দ্যাখানো হয়।
বীরবল বা গোপাল ভাঁড়ের সঙ্গে নসিরুদ্দীনের অবশ্য একটা বড়ো তফাৎও আছে। আর সেটাই মোল্লার বিশেষত্ব। কোনো কোনো গল্পে তিনি ভীষণ চালাক, বাঘা বাঘা লোককে ঘোল খাইয়ে ছাড়েন। কোথাও বা তিনি ডাহা মুখ্যু-কাশ্মীরী গাধার বেহদ্দ। মোল্লা যে আসলে কী-সেটা কেউই ঠিক ঠাহর করতে পারে না। সুফি দার্শনিকরা তাদের তত্ত্বশিক্ষায় মোল্লার গল্প ব্যবহার করেন। লোককে বলা হয়, পছন্দমতো একটা গল্প বেছে নাও, তারপর গভীরভাবে তার তাৎপর্য চিন্তা করো। জ্ঞান আসে ধ্যান থেকে। সায়েব পণ্ডিতরা অবশ্য এতে আপত্তি করেন, কিন্তু বেরুট-করাচির বিশেষজ্ঞদের মতে, নসিরুদ্দীন ছিলেন সত্যিসত্যিই সুফি গুরু।
গত হাজার কয়েক বছরে মানুষ অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়েচে, পায়নি আরো বেশি প্রশ্নের । তারই একটা হলো : আমরা হাসি কেন? সবার মন মতো কোনো জবাব আজ অবধি কেউ দিতে পারে নি। মোল্লার গল্প শুনে হাসি পায় কেন – এর কোনো পাকা জবাবও দেওয়া যাবে না।
তবে একটা কথা বলতে পারি। নসিরুদ্দীন-তৈমুর, বীরবল-আকবর, গোপাল-কৃষ্ণচন্দ্র -এই জুড়ির মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। নসিরুদ্দীন-বীরবল-গোপাল-এঁরা সবাই খুব সাধারণ লোক। চালচুলো নেই, পয়সা-কড়ি নেই, খানদানি বংশেও কেউ জন্মান নি। রাজা-বাদশার দয়া কুড়িয়েই বাঁচতে হয়। কিন্তু এক জায়গায় এদের জিৎ।
রাজা-বাদশার মুখের ওপর হাজির জবাব দিতে, তাঁদের মুখ একেবারে ‘দিস কাইণ্ড অব স্মল’ করে দিতে এদের জুড়ি নেই। এক দিক দিয়ে দেখলে, সাধারণ মানুষ (অবস্থার ফেরে যাদের মাথা নিচু করে দিন কাটাতে হয়) রাজারাজড়াদের ওপর শোধ তুলেচে এই গল্পগুলো দিয়ে। রাজার আছে লোক লস্কর হীরে জহরৎ ঢাল তলোয়ার। সাধারণ মানুষের সম্বলের মধ্যে সেরেফ বুদ্ধি।
আর এটাই তো সবচেয়ে বড় কথা। রাজার যা আছে-সে তো টাকার জোরে, গায়ের জোরে। তাতে কী এসে যায় যদি না-থাকে আসল জোর-বুদ্ধির জোর? বীরবল-গোপাল-নসিরুদ্দীনের অনেক গল্পে এই কথাটাই একটু চাপা গলায় বলা থাকে।
যতদিন পৃথিবীতে বহুরূপী রাজারাজড়ার গাজোয়ারি থাকবে, এসব গল্প পুরনো হবে না।
মোল্লার গল্প নিয়ে প্রথম ইংরিজি বই বেরিয়েছিল সোসাইটি ফর প্রমোটিং খ্রীশ্চান নলেজ-এর উদ্যোগে (ভাবা যায়?)—শ্রীমতী এয়িং (Ewing)-এর 'খোজার গল্প' (Tales of the Khoja, 1896) । হালে মোল্লার অনেক গল্প জড়ো করে তিনটি বই বার করেছেন সুফি বিশেষজ্ঞ ইদ্রিশ শাহ। বইগুলোর সর্বস্বত্বের মালিক মোল্লা নসিরুদ্দীন এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড ! এ বইএর অনেক গল্পই ইদ্রিশ শাহ্ সংগ্রহ থেকে।
এই বইটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে পড়ুন
প্রিয় পাঠকগণ, এই পোষ্ট হইতে আপনারা চতুরতার গল্প সংগ্রহ বই 'মোল্লা নাসিরুদ্দিন জিন্দাবাদ' -এর বাংলা পিডিএফ সংগ্রহ করিতে পারিবেন
No comments:
Post a Comment